এক ঢোক খেলেই প্রেমে হাবুডুবু!
বশীকরণের বিজ্ঞাপন নয়, হ্যারি পটারের উপন্যাস থেকে উঠে আসা ফ্যান্টাসিও নয়। সত্যি সত্যি আছে লাভ পোশন। অন্তত পক্ষে একদল বিজ্ঞানী তো তাই মনে করেন।
সরল কথায়, ‘লাভ পোশন’ এমনই এক আরক, যা খেলে প্রেমে পড়তে বাধ্য হবেন যে কেউ। ইউরোপের অসংখ্য কিংবদন্তিতে ছড়িয়ে রয়েছে ‘লাভ পোশন’-এর কথা। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি বীর রাজা আর্থারের গাথায় বার বার উঠে এসেছে লাভ পোশন। যাঁর প্রেমে যাঁর পড়া উচিত নয়, তিনি সেই গর্হিত প্রেমে পড়ে কেলেঙ্কারির একসা ঘটাচ্ছেন, এহেন কাহিনি ভুরি ভুরি। পরে এই বিশেষ আরকটিকে জে কে রাওলিং চমৎকার ভাবে ব্যবহার করেছেন তাঁর হ্যারি পটার সিরিজে। কিন্তু বাস্তবে কি সত্যিই রয়েছে লাভ পোশন?
আদি মধ্যযুগে ইউরোপের জাদুবিদ্যা বিশারদ ড্রুইডরা নাকি বানাতে জানতেন লাভ পোশন। পরে তা অধিকারে আসে অ্যালকেমিস্টদের। অনেকেই মনে করেন, অ্যালকেমিস্টরা এই আরক আকছার বানাতেন। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ব্যাপারটায় আঁচড় কাটতে পারেনি। তাই বলে বিজ্ঞানীরা বসে থাকার বান্দাই নন। এক শ্রেণির বৈজ্ঞানিক এই উদ্ভট আরকটি তৈরি করতে আগ্রহী হয়ে পড়েন। ‘নিউরোপেপটাইড অক্সিটোসিন’ নামের একটি রাসায়নিক, মানুষের সামাজিক আচরণকে প্রভাবিত করে। সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি ও সাইকো বায়োলজির অধ্যাপক এম হেইনরিখ ও জি ডোমেস জানাচ্ছেন, সামাজিক সম্পর্ক, বিশেষত আবগের সম্পর্কগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই রাসায়নিক। এই রাসায়নিককে ঘিরেই ভাবতে শুরু করেন অনেক বিজ্ঞানী যে, এটিই ‘লাভ পোশন’-এর কাজ করতে পারে কি না।
কিন্তু আজ পর্যন্ত এই রাসায়নিক কেন, ইন্টারনেটে হুড়মুড়িয়ে পোস্ট করা অজস্র জড়িবুটি— কোনওটিই কাজে আসেনি। ‘নিউরোপেপটাইড অক্সিটোসিন’ নিয়ে তৈরি হয়েছে নৈতিক বিতর্কও। এতে অনিবার্যভাবে কোনও মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বিঘ্নিত হয়। তাঁর পছন্দ-অপছন্দের উপরে জোর খাটানো হয়।
‘লাভ পোশন’ নিয়ে গবেষণা শেষমেশ আটকে থাকে এই নৈতিক প্রশ্নেই— প্রেম তো একান্ত ব্যক্তিগত রুচির, তাকে কি আরক খাইয়ে বের করে আনা যায়?
No comments: