মহেশতলার সবচে বড় ফ্লাইওভারের চাপে অতিষ্ঠ মহেশতলাবাসী

যেকোনো বড় কিছু করার জন্য অনেক ত্যাগ করতে হয়। সেই ত্যাগের মধ্যে জড়িয়ে থাকে অনেক বেদনার কাহিনী। তাজমহল তৈরির পিছনেও বহু প্রজার কান্নার কাহিনী প্রচলিত আছে। এই মুহূর্তে দেশের বড় ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়ে সেই কষ্টের অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন মহেশতলাবাসী। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের দু’ধারে প্রথমে বিশালাকার নর্দমা তৈরি হয়েছিল। তারপরে নির্মাণ করা শুরু হয়েছে রাস্তার মাঝের স্তম্ভ। এরজেরেই রাস্তার বিভিন্ন জায়গার হয়ে গিয়েছে ছোট বড় নানান গর্ত। নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যা মহেশতলার দীর্ঘদিনের। একটু বৃষ্টিতেই এলাকার বিভিন্ন এলাকায় জল জমে যাওয়ার ‘সুনাম’ রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে রাস্তার মাঝে এবং ধারে ছট বড় গর্ত হয়ে যাওয়ায় সেই সমস্যা আরও জোড়াল হয়েছে। একইসঙ্গে বেহাল বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের উপর দুর্ঘটনা এখন নিত্য দিনের সঙ্গী। কখন আবার সেই দুর্ঘটনা মানুষের প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে দুর্ভোগ সহ্য করে চলেছে মহেশতলাবাসী। ‘উন্নয়নে’র অপেক্ষায় সেইসব কিছুই মুখ বুজে সহ্য করে চেলেছেন তাঁরা। রাস্তার গর্তের মধ্যে পরে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। মাঝের মধ্যেই গাড়ির চাকা গর্তের মধ্যে পরে আটকে যায়। আর ট্রাফিক জ্যাম তো নিত্য দিনের সঙ্গী। ঘন্টার পর ঘন্টা বাস, গাড়ি জ্যামে ফেঁসে থাকে, ৫ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। ভারী বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, জল রাস্তা গর্ত সব মিলে মিশে একাকার। ডাকঘর, জলকল, মোল্লারগেটের রাস্তার পরিস্থিতি তো ভয়াবহ। এরম পরিস্থিতিতে অনেক গাড়িই জিঞ্জিরাবাজার দিয়ে ঢুকতে চায়না। কেউ যদি সখের গাড়িনিয়ে এই রাস্তায় কয়েক দিন যাতায়াত করে তবে তার গাড়ির অবস্থা নিশ্চিত ভাবে খারাপ হবে কয়েক দিনে। এরম পরিস্থিতিতে আপনি যদি বাসএ ডাকঘর , জলকলের উপরদিয়ে জিঞ্জিরাবাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে আপনার মনে হতেই পারে যে আপনি বঙ্গোপসাগরের উপরদিয়ে ছোট নৌকো চড়ে যাচ্ছেন। কথাটা হাসির হলেও কীযে ভয়াবহ পরিস্থিতি তা একমাত্র মহেশতলার নিত্যদিনের যাত্রীরাই টের পাচ্ছেন। তবে বেহাল রাস্তার কিঞ্চিত হাল ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে মহেশতলা থানা। শুক্রবার দুপুরের দিকে কয়েকজন পুলিশকর্মী এবং ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে সমগ্র এলাকা ঘুরে দেখেন মহেশতলা থানার ইনস্পেক্টর ইনচার্জ শুভাশিস চৌধুরী। সেইসঙ্গে রাস্তা বিভিন্ন অংশ যাতে কাজ চালানোর মতো করে রাখা যায় সেই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ৩৬ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা যে কার্যত অসম্ভব তা বুঝতে পেরেছেন সকলেই। এক ইঞ্জিনিয়ারের মতে, “কাজ তো রোজই এগোচ্ছে। আমরা কেউ বসে নেই”। প্রথমে ঠিক হয়েছিল বজবজ থেকে শুরু হয়ে ৭.৪ কিমি দৈর্ঘ্যের ওই উড়ালপুল তারাতলা রোড পর্যন্ত যাবে। পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং পার্কসার্কাসের পরমা উড়ালপুলের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তা জিঞ্জিরাবাজার মোড় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য কমে হয় ৭কিমি। তারাতলা রোড সংলগ্ন এলাকার বেশকিছু জায়গায় মাটির নিচে গার্ডেনরিচের জলাধারের জলের পাইপ এবং সিইএসই-এর তার গিয়েছে। সেই কারণেই সবথেকে বড় ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেএমডিএ-র এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার। তবে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ যে কবে শেষ হবে তা ভবিষৎ বলবে তবে মনে করা হচ্ছে এই প্রকল্পের কাজ আরও আগামী দুই বছর ধরে চলবে। তাই আরও দুই বছর ধরে এই যন্ত্রনা সজ্জ্হ করার জন্য মহেশতলাবাসীদের আগের শুভেচ্ছা রইলো।

No comments:

Powered by Blogger.