সাপের মতোই খোলস ছাড়তে হয় ১৬ বছরের মেয়ের

সত্যজিৎ রায়ের ‘খগম’ নামের সেই অলৌকিক গল্পটি মনে আছে? যেখানে এক ব্যক্তি এক সাধুবাবার পোষা সাপকে মেরে তাঁর অভিশাপে নিজেই সাপ হয়ে যান। মানুষের সাপ হয়ে ওঠার গল্প হিন্দি সিনেমাতেও দেখা গিয়েছে একাধিকবার। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের ছত্রপুর জেলার ‘সর্পকন্যা’ শালিনী যাদবের কাহিনি কোনও গল্প নয়। একেবারে কঠোর বাস্তব। এক বিরল রোগের শিকার এই ষোড়শী। তার সারা শরীরে রয়েছে সাপের মতো চামড়া। প্রতি ৬ সপ্তাহ অন্তর সেই চামড়া উঠে গিয়ে আবার নতুন করে চামড়া গজায়। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্রে জানা যাচ্ছে, শালিনীর এই রোগের নাম এরিথ্রোডার্মা। কেউ কেউ একে রেডম্যান সিনড্রোমও বলে। এমন আশ্চর্য অসুখে আক্রান্ত শালিনীকে দেখলে আশপাশের মানুষরা সহমর্মিতা না দেখিয়ে ভয়ে সরে যায়। ভেবেও দেখে না, কতটা কষ্ট আর অস্বাচ্ছন্দ্য়ের মধ্যে রয়েছে মেয়েটি। দিনের প্রতি ঘণ্টায় চামড়ার পরিচর্যা করতে হয়। স্নান করতে হয় সাবান দিয়ে। মাখতে হয় ক্রিম। শুধু তাই নয়, লাঠি ছাড়া হাঁটতেও পারে না বেচারি। তার সেই যন্ত্রণাকে না বুঝে দূরে সরে থাকতে চায় প্রতিবেশীরা। শালিনীর এই রোগ যে সারে না এমনটা নয়। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে তার বাবা জানতে পারেন, এই রোগের চিকিৎসা আছে, তবে তা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। ব্রনর সমস্যা থেকে মুক্তির সহজ ঘরোয়া উপায় শালিনীর বাবা রাজ বাহাদুর পেশায় একজন দিনমজুর। কোথা থেকে জোগাড় করবেন সেই বিপুল খরচ! এ দিকে মেয়ের কষ্টে বাবা-মা’র মন বিচলিত হতে থাকে। অবশেষে অন্ধকারের শেষে ফুটে ওঠা আলোর মতো শালিনীর জীবনেও এসেছে সুস্থতার সংকেত। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অনেক চেষ্টা করে শালিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সফল হয়েছে। বহু জায়গায় আবেদন করেও নিস্ফলা হয়ে ফিরতে হচ্ছিল। এর পর স্পেনের এক বেসরকারি হাসপাতাল তাদের আবেদনে সাড়া দেয়। তারা শালিনীর চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে রাজি। খুশকি তাড়ানোর কয়েকটি ঘরোয়া উপায় আপাতত কিছু সময়ের অপেক্ষা। তার পর দেশ থেকে বহু দূরে চিকিৎসার জন্য যেতে হবে মধ্যপ্রদেশের এই কিশোরীকে। সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার কষ্টকে অতিক্রম করতে আর কয়েকদিন। তার পরই‘সর্পকন্যা’র অভিশাপকে মুছে ফেলে নতুন করে জীবন শুরু করবে শালিনী।

No comments:

Powered by Blogger.